সোমবার, ২৭ জুন, ২০১১

মিলনমেলায় আমার মন্তব্যমালা(পিতা মাতা ও সন্তানের অধিকার)

পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার

এবং তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে “উফ” শব্দটিও বলো না, এবং তাদেরকে ধমকও দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে,নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে আমার পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশব কালে লালন-পালন করেছেন।(ইসরা-২৩-২৪)


পিতা মাতার ঋণ পরিশোধ োধ 

আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণীত রাসূল সাঃ বলেন কেউ পিতা মাতাকে তাদের বিনিময় পরিশোধ করতে পারবেনা।একমাত্র কেউ যদি তাদের ক্রীতদাস বা দাসি রূপে পায় এবং খরিদ করে আজাদ(মুক্ত)করতে পারে তবেই তাদের ঋণ পরিশোধ হবে।(মুসলিম-১৫১০)

সন্তানের জীবনে পিতা মাতার গুরুত্ব

পিতা মাতার গুরুত্ব সন্তানের জীবনে কত বেশি দেখুন।আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন আমার এক স্ত্রী তাকে আমি খুব ভালবাসতাম,অথচ আমার পিতা ওমর রাঃ তাকে অপছন্দ করেন।একদা তিনি আমাকে বললেন তাকে তালাক দিয়ে দিতে।এতে আমি অস্বিকার করলে তিনি রাসূল সাঃ কে জানালেন বিষয়টি।তখন আল্লাহর রাসূল আমাকে ঐস্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিতে বললেন।(আবুদাউদ,তিরমিযী)


মাতা পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তি প্রবেশপথ 

আবূ দারদা রাঃ এর বর্ণনা, একদা তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো আমার স্ত্রীকে আমার মা তালাক্ব দিতে বলছেন।তখন উনি বললেন আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি পিতা মাতা জান্নাতের মধ্যবর্তি প্রবেশপথ।তুমি চাইলে সে দরজাটিকে ধ্বংশ করতে পার বা রক্ষা করতে পার।(তিরমিযি)

সন্তান লালন পালনে কিছু নির্দেশনা 

কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ-হে ঈমানদ্বারগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার কে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর।(তাহরীম-৬)

নিজেদের রক্ষা করবো আল্লাহর আদেশ মেনে নিষেধ থেকে বিরত থেকে।আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি ও শাস্তিযোগ্য কাজ থেকে তাওবা করে।
আর পরিবার ও সন্তানদের রক্ষা করবো তাদের প্রকৃত লালন পালন,আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করে,তাদের কে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানতে বাধ্য করে।

আপনার সন্তানকে শুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে নিম্নের দিকনির্দেশনা গুলো কাজে আসবে।

১-আপনি যেহেতু তাদের পিতা সুতরাং আপনার সন্তানরা সর্বপ্রথম যাকে অনুস্মরণ করবে সে হলেন আপনি।আপনাকে তারা একজন বাবা,শিক্ষক,মুরুব্বী হিসেবে অনুস্মরণ করবে।সুতরাং আপনি আপনার ব্যবহারে,চরিত্রে,চলাফেরায় তাদের জন্য আদর্শ শিক্ষনীয় হয়ে উঠুন।
২-ঘরে সাধারণত শিশুরা যা দেখে যা শুনে এর বড় একটি প্রভাব পড়ে তার ভবিষ্যত জীবনে।তাই আপনার ঘরের পরিবেশকে তৈরী করুন ইসলামী,ঈমানী,কুরআনী পরিবেশে।
৩-সন্তানকে শিশুকাল থেকেই কুরআনের হিফজ এবং কুরআন শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করুন।শিশুকালই তার সোনালি সময় হিফজুল কুরআনের।এরপর সম্ভব হবেনা।
৪-শিশু বয়স থেকেই সন্তানকে সময় দেয়া।বাবা কে যেন সে বন্দু ভাবে।তার সব সমশ্যা যাতে সে আপনার সাথে শেয়ার করতে পারে।এবং তাকে খারাপ সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা।কথয় আছে সৎসঙ্গে স্বর্গবাস,অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।রাসুল সাঃ বলেন-মানুষ তার বন্দুর ধর্মের উপর(বন্দু যেমন সেও তেমন)সুতরাং তোমরা দেখ কে কাকে বন্দু বানায়।(আহমদ,আবু দাউদ,তিরমিযী)
৫-সন্তানদের চিন্তাধারা কে উচ্চ পর্যায়ে রাখা।এতে তার জ্ঞান ও মেধার বিকাশ হবে।নিম্নমুখিতা তাকে নিম্নেই রাখবে।
৬-সন্তানের লেবাস পোষাক চলা ফেরায় সব কিছুতে যেন ইসলামি ভাবধারা বজায় থাকে।মেয়েলি ভাব মেয়েদের সাথে উঠাবসা শিশু কাল থেকেই যেন দৃষ্টি দেয়া হয়।
৭-আল্লাহ,আল্লাহর রাসূল এর ভালবাসা শিশু বয়স থেকেই তাদের অন্তরে স্থাপন করা।
৮-দ্বিনী এলেম শিক্ষার প্রতি শিশুকাল থেকেই তাদের মনে আগ্রহ তৈরি করা।এবং এতে পার্থিব কোন উদ্দেশ্য যেন মনে না আসে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা।
৯-সন্তানের জন্য সদা আল্লাহর নিকট দোয়া করা।বারবার বেশি বেশি করে দোয়।পিতা মাতার দোয়া সন্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১০-তাদের আদর স্নেহ দেয়া।ভালবাসা দিয়ে কাছে রাখা।মানুষের সামনে তাদের ভুলত্রুটি আলোচনা না করা।একান্তে বসে শাষন করা।অল্প দোষে অধিক শাস্তি না দেয়া।
আল্লাহ আমাদের সবার সন্তানদের মুত্তাক্বীদের ইমাম বানান।আমীন।

জন্মের পূর্বেই সন্তানের উপর ইহসান 
এক বেদুঈন তার সন্তাদের একদিন ডেকে বললেন আমি তোমাদের উপর তোমাদের শিশুকালে তোমরা বড় হওয়ার পর এবং তোমদের জন্মের পূর্বেও ইহসান করেছি।সন্তানরা বললো,আপনার ছোটবেলায় ও বড়বেলার ইহসান বুজতে পারলাম।কিন্তু জন্মের পূর্বের ইহসানটা কিভাবে? উত্তরে বেদুঈন বললো আমি তোমাদের জন্য এমন মা বাচাই করেছি যাকে নিয়ে দ্বিনী ভাবে এবং পার্থিব ভাবে তোমাদের লজ্জিত না হতে হয় ।তাই আসুন আমরা যারা বিয়ে করিনি তারা এ ব্যপারটির দিকে দৃষ্টি দেই।এবং বাবারা তাদের সন্তানদের বিয়ে করানোর সময় ও লক্ষ্য রাখি।
রাসূল সাঃ বলেছেনঃ-মেয়ের চারটি দিক দেখে তাকে বিয়ে করা হয়।
১-সম্পদ দেখে
২-বংশ দেখে
৩-রূপ দেখে
৪-দ্বীন দেখে (আল্লাহভীরুতা)
সবশেষে আল্লাহর রাসুল বললেন যদি প্রথম তিনটি না থাকে শুধু চতুর্থ গুনটি থাকে তবে তাকে বিয়ে করে সৌভাগ্যবান হও তোমার হাত ধুলোমলীন হোক।

নবজাতকের নামের গুরুত্ব 

নামের ব্যপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।রাসূল সাঃ কয়েকজন সাহাবীর নাম বড় অবস্থায় পরিবর্তন করেছেন।যেমন এক সাহাবীর নাম অগ্নির অর্থে হওয়ায় তিনি বললেন তুমিতো সব জ্বালিয়ে রাখ করে দেবে।তাই কারো সন্তানের নাম ভাল অর্থবোধক না হলে তা পরিবর্তন করে নেয়াই শ্রেয়। 

মৃত্যুদূত ও তার বন্দুর গল্প

গল্পটি বলার পূর্বে মৃত্যু সম্পর্কে একটু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি।মৃত্যু আমাদের জীবনের একটি চিরন্তন সত্য অধ্যায়।যা কেউই অস্বিকার করতে পারবেনা।যার সময় যখন নির্ধারিত ঠিক তখনি তাকে যেতে হবে এমায়াময় পৃথিবী ছেড়ে।একটুও আগপিছ হবেনা সেই নির্ধারিত সময়ে।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছেঃ-ولكل امة اجل فاذا جاء اجلهم لا يستأخرون ساعة ولايستقدمون প্রত্যেক জাতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।সুতরাং যখন সেই নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হবে তখন তা এক মুহূর্তকালও আগে এবং পরে হবেনা।(আরাফ-৩৪)

মৃত্যুর স্মরণ ও তার প্রস্তুতি
রাসূল সাঃ সাহাবাদেরকে সবসময় মৃত্যুকে স্মরণ করা ও নেক আমল দ্বারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার ব্যপারে উৎসাহ দিতেন।এবং এটাকে ভাল ও উত্তম দিক হিসেবে গণ্য করতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেনঃ-আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি রাসূল সাঃকে প্রশ্ন করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বিচক্ষণ ও গোছালো মানুষ কে?
উত্তরে তিনি বললেনঃ-সে ই যে মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করে এবং যার মৃত্যুর জন্য অধিক প্রস্তুতি রয়েছে।(ত্বাবরানী)
অন্য হাদিসে রাসূল সাঃ বলেছেনঃ-তোমরা মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর(ত্বাবরানী)

মৃত্যুর আকাংখা নিষিদ্ধ 
আনাস রাঃ থেকে বর্ণীত রাসূল সাঃ বলেনঃ-তোমরা কোন রোগ বা বিপদে পড়ে মৃত্যুর আকাংখা করোনা।যদি একান্তই আল্লাহর কাছে মৃত্যুর আকাংখা করতেই হয় তবে এভাবে বল, হে আল্লাহ যতদিন হায়াত আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় ততদিন আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন।যখন আমার জন্য মৃত্যু মঙ্গলজনক হবে তখন আমায় মৃত্যু দান করুন।(তিরমিযী,আবূদাউদ)

মুল গল্প 
প্রাচীনমানুষের গল্পসম্ভার থেকে সংকলিতঃ-
গল্প ১-এক লোক মৃত্যুদূত আজরাইল আঃ এর বন্দু ছিল।একদিন মৃত্যুদূত তার সাথে সাক্ষাত করতে এলে সে প্রশ্ন করল আপনি কি আমার সাক্ষাতে এসেছেন না প্রাণবধে এসেছেন?
উত্তরে মৃত্যুদূত বললো না আমি আজ তোমার সাক্ষাতেই এসেছি।তখন লোকটি বললো আমি আমার বন্দুত্বের খাতিরে আপনার নিকট একটি আবেদন করছি।আমার হায়াত যখন শেষ হবে,
এবং আপনি যখন আমার প্রাণ নিতে আসবেন দয়া করে তার আগে আমার নিকট একটা দূত পাঠাবেন।
আজরাইল আঃ বললেন তোমার ইচ্ছা পূরণ হবে।অনেকদিন পর একদিন মৃত্যদূত তার নিকট এলে সে জিজ্ঞেস করল আপনি নিশ্চয় সাক্ষাতে এসেছেন?
মৃত্যুদূত বললো না আমি আজ সাক্ষাতে নয় বরং তোমার প্রাণ নিতে এসেছি।তখন লোকটি বললো আপনিতো আমাকে কথা দিয়েছিলেন আপনি মৃত্যুদূত হয়ে আসার পূর্বে আমাকে কোন দূত পাঠিয়ে জানাবেন।মৃত্যুদূত বললো তাতো এসেছে তোমার নিকটে।তুমি আগে স্থির হয়ে হাটতে এখন কুজো হয়ে হাটছ।তোমার চুল আগে কালো ছিল এখন হয়েছে সাদা।তোমার কন্ঠস্বর আগে স্পষ্ট ছিলো এখন তুমি ভাঙ্গা স্বরে কথা বলছ।তুমি ইতিপূর্বে কেমন শক্তিশালী তাগড়া যুবক ছিলে এখন হয়েছ দূর্বল বৃদ্ধ।আগে কেমন প্রখর দৃষ্টি শক্তি ছিল তোমার আর এখন কেমন ঝাপসা দেখ তুমি।তুমি আমার নিকট একটি দূত চেয়েছিলে,অথচ কতগুলো দূত এসেছে তোমার নিকট।এর পরও তুমি আমায় দুষছ?!!!

গল্প ২-আল্লাহ তাআলা সূরায়ে লোক্বমানের শেষ আয়াতে ইরশাদ করেনঃ-কেউ জানেনা তার মৃত্যুর স্থান, কোথায় সে মৃত্যুবরণ করবে।
মৃত্যুদুত ছিল নবী সুলাইমান আঃ এর বন্দু।একদিন মৃত্যুদুত সুলাইমান আঃ এর সাথে দেখা করতে গিয়ে উনার দরবারে একলোককে দেখে আশ্চর্য্য হয়ে ঐলোকের দিকে ভাল করে তাকাতে লাগলেন।এতে লোকটি বেশ ঘাবড়ে গেল। ঐলোকটি সুলাইমান আঃ এর সাথে সাক্ষাত করতে এসেছিল অনেক দূর থেকে।যাহোক মৃত্যুদূত যখন দরবার ছেড়ে চলে গেল লোকটি সুলাইমান আঃ কে বললো জনাব আমি অনুমতি চাইছি। আপনার এখানে আমার খুব ভয় করছে।আমি আমার এলাকায় চলে যাচ্ছি।লোকটি চলে গেল।পরে যখন মৃত্যুদূত আবার সুলাইমান আঃ এর দরবারে এলেন, উনি জানতে চাইলেন ঐদিনের ঘটনা সম্পর্কে।তখন মৃত্যদূত সুলাইমান আঃকে জানালেন ঐলোকটার মৃত্যুবার্তা পৌছে গিয়েছিলো আমার নিকট।তার মৃত্যস্থান তার নিজ এলাকা।আমি তাকে আপনার দরবারে দেখে আশ্চর্য্য হয়েছি যে সে এখানে কেন? কখন যাবে তার মৃত্যুস্থানে।তাই তার দিকে ওভাবে তাকিয়েছিলাম।
মৃত্যুদূতের একটি চাহনি তাকে তার মৃত্যুস্থানে রওনা করে দিল।যার মৃত্যু যেথা সেখানেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।সুবহানাল্লাহ!!!

একটি সন্দেহ ও তার সমাধান
কারো মনে প্রশ্ন আসতে পারে কুরান হাদিসে নাই এমন ঘটনাকে কুরানের ব্যাখ্যা স্বরূপ বা ইসলামী লেবাস পরিয়ে এভাবে বর্ণনা ঠিক কি না?
উত্তরঃ-এসব কাহিনীকে(ইস্রাইলী রিওয়ায়াত)বলা হয়।এব্যপারে রাসূল সাঃ আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন হাদিসের মধ্যে।
আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা: থেকে বর্ণীত রাসূল সা: বলেছেন-তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। আর বনী ইসরাইল থেকে বর্ণনা কর, কোন সমস্যা নাই। আর যে আমার উপর ইচ্ছাকৃত মিথ্যারোপ করল সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নিল।(বুখারী-৩২৭৪)
তবে ইসলামিক স্কলারগণ এর জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।যেমন কাহিনী কুরান হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া,জ্ঞান ও বিবেক বুজতে অক্ষম এমন অকল্পনীয় আহামরি কিছু না হওয়া ইত্যাদী।

আল্লাহ আমাদের সকলকে মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুত থাকার তৌফীক্ব দিন।আমীন।

তাওবার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং শর্তাবলী

তাওবা অর্থ হলো ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা।আর শরীয়তের ভাষায় তাওবা হলো কোন পাপ হয়ে গেলে তা থেকে লজ্জিত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা।আমার পূর্বের তিনটি পোষ্ট ছিল গুনাহ সম্পর্কীত।গুনাহ করে ফেললে বা হয়ে গেলে তার শাস্তি থেকে পরিত্রানের একমাত্র উপায় হল তাওবা।তাই গুনাহ ও তাওবা একে অপরের সাথে ওৎপোতভাবে জড়িত।এই জন্যই আজকে তাওবা নিয়ে লিখতে বসেছি।মানব জাতির পিতা আদম আঃ থেকেই মানুষ ভূল করা আরম্ভ করেছে।তাই মানুষ মাত্রই ভূল বা গুনাহ করবে এটাই স্বাভাবিক।হাদিসে পাকে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেনঃ-প্রত্যেক আদম সন্তানই অপরাধ করে,তবে উত্তম অপরাধি তারাই যারা অপরাধ হয়ে গেলে তা থেকে তাওবা করে নেয়।(আহমদ,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ)অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,রাসূল সাঃ বলেনঃ-ঐরবের শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে যদি তোমরা গুনাহ না কর(অর্থাৎ মানুষ মাত্রই গুনাহ হবে।কারণ মানুষ ফেরেস্তা নয়)তবে আল্লাহ তোমাদের বাদ দিয়ে এমন এক জাতি আনয়ন করবেন যারা গুনাহ করবে এবং গুনাহ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন।(মুসলিম)
তাওবার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের সূরায়ে নূরে ইরশাদ করেনঃ-وتوبوا إلى الله جميعا ايه المؤمنون لعلكم تفلحون হে মুমিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর,যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।(নূর-৩১)বর্ণীত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাওবা কে সফলতার সাথে যুক্ত করেছেন।
সূর হুদে ইরশাদ করেনঃ-وأن استغفروا ربكم ثم توبو إليه তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর তৎপর তাঁর প্রতি প্রত্যাবর্তন কর(নিবিষ্ট হও)হুদ-৩)বর্ণীত আয়াত থেকে বুজতে পারি যে শুধু গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা যথেষ্ট নয়,বরং ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট হতে হবে।আর এটাই হল তাওবা।শুধু ক্ষমা প্রার্থনার নাম তাওবা নয়।
সূরা তাহরীমে ইরশাদ হয়েছেঃ-يا ايهاالذين آمنو توبوا الى الله توبة نصوحا হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর একান্ত বিশুদ্ধ তাওবা(তাহরীম-৮)এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিশুদ্ধ তাওবা করতে বলেছেন।বিশুদ্ধ তাওবা সম্পর্কে সামনে আলোচনা করবো।এছাড়াও তাওবা ও ইস্তেগফারের গুরুত্ব আল্লাহ তাআলা অনেক আয়াতে বর্ণনা করেছেন।
তাওবার প্রয়োজনীয়তা 
আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি-আল্লাহর শপথ আমি দৈনিক সত্তরেরও অধিকবার আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করি।(বুখারী-৬৩০৭-আহমাদ-২/২৮২,৩৪১)
আঘার বিন ইয়াসার মুযানী রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেনঃ-হে মানুষ সকল তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর,কেননা আমি দৈনিক শতবার তাওবা করি।(মুসলিম-২৭০২)দেখুন আল্লাহর রাসুল সাঃ যেখানে দৈনিক শতবার তাওবা করেন সেখানে আমাদের কি করা উচিত? অন্য এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাঃ কে এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন,ইয়া রাসূলাল্লাহ আল্লাহ তো আপনার আগে পিছের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন, তাইলে আপনার এত তাওবা-ইস্তেগফারের প্রয়োজন কি? উত্তরে আল্লাহর রাসূল বললেন,আল্লাহ আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন তাই বলে কি আমি কৃতজ্ঞ বান্দা হবোনা!অর্থাৎ আল্লাহ আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তাই আমি তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় স্বরূপ এত তাওবা ইস্তেগফার করি।
তাওবার শেষ সময় 
আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য তাওবার দ্বার সব সময় খোলা রেখেছেন।যখনি বান্দা চাইবে তাওবা করে আল্লাহর নিকট ফিরে আসতে পারবে।কিন্তু এমন দুটি সময় আছে যখন বান্দা চাইলে ও আল্লাহ তার তাওবা গ্রহন করবেননা।
এক-যখন মৃত্যুদূত বান্দার প্রাণ নিতে আসবে।
দুই-ক্বিয়ামতের পূর্বে যখন ক্বিয়ামতের বড় নিদর্শণ সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় হবে।
আবু মুসা আশআরী রাঃ বর্ণনা করেন,রাসূল সাঃ বলেছেনঃ-আল্লাহ তাআলা রাতে আপন হাত বিছিয়ে দেন দিনের পাপীদের তাওবা গ্রহন করার জন্য,আর দিনের বেলা হাত প্রশারীত করেন রাতের পাপীদের তাওবা গ্রহন করার জন্য।এভাবে চলতে থাকবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়া পর্যন্ত।(মুসলিম-২৭৫৯)
আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণীত রাসূল সাঃ বলেন যে ব্যাক্তি সূর্য পশ্চিম থেকে উদয় হওয়ার পূর্বে তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা ক্ববুল করবেন।(মুসলিম-২৭০৩)ওমর রাঃ থেকে বর্ণীত রাসূল সাঃ বলেন, আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহন করবেন যতক্ষণ না তার গলার গরগর আওয়াজ শুরু হবে(অর্থাৎ তার রুহ যখন গলায় উঠে যাবে)তিরমিযী-৩৫৩৭)কুরানে কারীমে ইরশাদ হয়েছেঃ-তাওবা তাদের জন্য নয় যারা পাপ করেছে অতপর যখন মৃত্যু আসে তখন তারা বলে আমি এখন তাওবা করলাম।(নিসা-১৮)এটা একেবারে মৃত্যুর পূর্ব অবস্থা।যখন আজরাইল আঃ মানুষের প্রাণ নিতে আসবেন।কারন ঈমান হল অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের নাম।আর এই দুই অবস্থায়ই মানুষের সামনে আখিরাত দৃশ্যমান হয়ে যায়।
তাওবার হুকুম
ইসলামী স্কলারগণ প্রত্যেক গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব।যদি কেউ অনেক গুলো গুনাহে জড়িত এবং সে যদি একটি বা কিছু গুনাহ থেকে তাওবা করে বাকিগুলো থেকে নয়,তবে সে যে গুনাহ থেকে তাওবা করেছে ঐ তাওবা শুদ্ধ।কিন্তু অন্য গুনাহগুলো তার কাঁধে রয়ে যাবে।
তাওবার শর্তাবলী 
ইসলামী স্কলারগণ তাওবা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত বর্ণনা করেছেনঃ-
১-যে গুনাহ থেকে তাওবা করছে সে গুনাহ সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেয়া।
২-কৃত গুনাহের উপর লজ্জিত হওয়া।
৩-আগামি জীবনে এই গুনাহ না করার পণ করা।
এই তিনটি শর্ত হল কৃত গুনাহ যদি আল্লাহ তাআলার সাথে সিমাবদ্ধ থাকে।কিন্তু যদি কৃত গুনাহ কোন মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয় তবে চতুর্থ আরেকটি শর্ত আছে তা হলঃ-
৪-যার অধিকার সে নষ্ট করেছে বা ক্ষুন্ন হয়েছে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।যদি তাতে সে অক্ষম হয় তবে মাফ চেয়ে নেয়া।যেমন কারো সম্পদ ভক্ষণ বা আত্মসাত করে থাকলে তাকে তা ফেরত দিবে।কারো পরনিন্দা করে থাকলে বা কাউকে অপবাদ দিয়ে থাকলে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিবে।উপরোক্ত শর্ত পূরণ করে তাওবা করলে তা বিশুদ্ধ তাওবা এবং আল্লাহ ইনশাল্লাহ তার তাওবা ক্ববুল করবেন ও তাকে ক্ষমা করবেন।হাদিসে পাকে এসেছে যে ব্যক্তি তার সকল গুনাহ থেকে তাওবা করবে সে মায়ের পেট থেকে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায়।আল্লাহ তাআলা আমাদের কে সকল গুনাহ থেকে তাওবা করে পবিত্র হওয়ার তাওফীক্ব দিন।আমীন। 

কবিরা গুনাহের বর্ণনা ২

পূর্বের পোষ্টে কবিরা গুনাহের ৩৫ নং পর্যন্ত আলোচনা করেছি।এখানে তার পর থেকে শুরু করছি
৩৬-প্রস্রাব থেকে পরিচ্ছন্ন না থাকা(এটা খৃষ্টান্দের একটি সংস্কৃতি)
৩৭-চতুস্পদ প্রাণীর মুখে লোহা দিয়ে চিহ্ন দেয়া
৩৮-দুনিয়া হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে দ্বিনী এলেম শিক্ষা করা এবং এলেম শিক্ষা করে তা প্রচার ও প্রকাশ না করে লুকিয়ে রাখা
৩৯-গচ্ছিত মাল বা আমানতের খেয়ানত করা
৪০-কারো উপর দয়া,অনুগ্রহ,দান বা উপকার করে খোঁটা দেয়া
৪১-তাক্বদীর বা ভাগ্য কে অস্বিকার করা
৪২-চুপি চুপি লুকিয়ে মানুষের গোপন কথা শ্রবণ করা
৪৩-চোগলখোরি বা বিবাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এক জনের কথা অন্যের নিকট আদান প্রদান করা
৪৪-কাউকে লানত বা গালিগালাজ করা
৪৫-অঙ্গীকার,ওয়াদা বা চুক্তি ভঙ্গ করা
৪৬-জ্যোতিষি গনক বা যাদুকরকে বিশ্বাস করা
৪৭-স্ত্রী স্বামির অবাধ্য হওয়া
৪৮-মূর্তি বানানো বা প্রাণীর নোংরা ছবি,পেইন্টিং বানানো
৪৯-বিপদের সময় চিৎকার করে কান্নাকাটি করা,বুক বা মুখ চাবড়ানো,পরিধেয় পোষাক ছিঁড়ে ফেলে,মাথা ন্যড়া করা,চুল ছিঁড়ে ফেলা,নিজেদের জন্য ধ্বংশ ইত্যাদী ডেকে বিলাপ করা
৫০-বিদ্রোহ করা বা অতিরঞ্জিত করা
৫১-দুর্বল অধিনস্ত দাস দাসী,স্ত্রী কিংবা কোন প্রাণীর উপর হাত উঠানো বা প্রহার করা
৫২-প্রতিবেশী কে যেকোন ভাবে কষ্ট দেয়া
৫৩-কোন মুসলমান কে কষ্ট বা গালি দেয়া
৫৪-অহংকার বা সন্মানবোধ থেকে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা
৫৫-স্বর্ণ কিংবা রৌপ্যের পাত্রে আহার বা পান করা
৫৬-পুরূষ রেশমি কাপড়(সিল্ক)বা স্বর্ণ পরিধান করা
৫৭-গোলাম বা দাস মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া(দাস এযুগে নেই)
৫৮-আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে প্রাণী জবাই করা যেমন শয়তানের নামে যাদু করার জন্য,মূর্তির নামে,পীর সাহেবের নিয়তে ইত্যাদী
৫৯-জেনে শুনে পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে মানা বা দাবী করা
৬০-ঝগড়া বিবাদ,কারো সাথে নিজের ব্যাক্তিত্ত্ব প্রকাশ বা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দ্যেশ্যে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া
৬১-অতিরিক্ত পানি বেঁধে রাখা।যেমন কারো বাগান বা জমি উঁচু জায়গায় আর কারো নীচুতে।বৃষ্টি,ঝর্ণা,নদীর পানি উঁচু থেকে প্রবাহিত হয়ে নীচের দিকে আসে।উঁচু বাগান বা জমির মালিক তার জায়গায় পানি পর্যাপ্ত হওয়ার পরও অতিরিক্ত পানি যাতে নীচের দিকে প্রবাহিত হতে না পারে সে জন্য বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা
৬২-মাপে কম দেয়া(এটা খুব বেশি দেখা যায় আমাদের দেশের গোশ্ত বিক্রেতাদের মাঝে।এছাড়া অন্যরা ও করে থাকে।)
৬৩-আল্লাহ তাআলার পাকড়াও ও হস্তক্ষেপ থেকে নিশ্চিন্ত ও নির্ভয় হওয়া
৬৪-মৃত প্রাণীর গোস্ত এবং প্রাণীর রক্ত ও শুকরের গোস্ত খাওয়া
৬৫-কোন ওজর(শরীয়ত স্বিকৃত সমস্যা)ছাড়া জুমার নামাজ বা জামাত ছেড়ে দিয়ে একাকী নামাজ আদায় করা
৬৬-আল্লাহ তাআলার রহমত ও অনুগ্রহ থেকে নৈরাশ হওয়া
৬৭-কোন মুসলমান কে কাফির বলা
৬৮-ধোকাবাজী করা ও ঠকানো
৬৯-মুসলমানদের মধ্যে গোয়েন্দাগিরী ও তাদের গোপনীয়তা সম্পর্কে অবগত হওয়া(বিবাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে)
৭০-সাহাবাদের কাউকে গালি দেয়া
৭১-অসৎ বা বিচারক
৭২-বংশ নিয়ে একে অপরকে তিরস্কার বা ধিক্কার দেয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করা
৭৩-মৃত ব্যাক্তির উপর চিৎকার করে আহাজারি করা,বুক চাবড়িরা,বুক চাবড়িয়ে জামা কাপড় ছিড়ে বিলাপ করা
৭৪-রাস্তার চিহ্ন বা মাইলফলক সরিয়ে ফেলা(মিটিয়ে দেয়া)
৭৫-কোন অসৎকাজ প্রতিষ্ঠা কিংবা মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করা
৭৬-মহিলারা নিজের চুলের সাথে নকল চুল মিলানো এবং চেহারার লোম ইত্যাদী উঠানো সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য
৭৭-কোন ধাতব বা ধারাল বস্তু অন্যের দিকে উঁচু করা বা আঘাতের লক্ষ্যে নিশানা বানানো
৭৮-পবিত্র হারাম শরিফে(মক্কায়)বা হারামের সিমানার মধ্যে অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত হওয়া।
এখানে কবিরা গুনাহের বর্ণনা সমাপ্ত।নীচে সম্ভাব্য কিছু কবিরা গুনাহ উল্লেখ করছি,যা উলামায়ে কিরাম মূল গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেননি।
সম্ভাব্য কবিরা গুনাহ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন ঃ-
১-যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে বা দাস কে স্বামি ও মালিকের বিরুদ্বে উস্কে দিল সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়
২-ভায়ের সাথে এক বৎসর সম্পর্ক ছিন্ন রাখা তাকে হত্যা করার সমতুল্য
৩-যে ব্যক্তির সুপারিশে আল্লাহ প্রদত্ত কোন শাস্তি রহিত হল সে যেন একাজ দ্বারা আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল
৪-তোমরা মুনাফেক্বকে(সাইয়েদুনা)আমাদের নেতা বলোনা।মুনাফেক্বকে নেতা বললে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন
৫-যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে উঁকি মেরে দেখল,ঐ পরিবারের জন্য তার চক্ষু নষ্ট করে দেয়া বৈধ
৬-যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করেনা সে আল্লাহ তাআলার প্রতি ও অকৃতজ্ঞ।
কবিরা গুনাহ সর্ম্পকীত আমার গত তিনটি পোষ্ট হিজরী সপ্তম শতকের বিশিষ্ট মনীষী আল্লামা শামছুদ্দীন যাহবী রাহঃ এর সংক্ষিপ্ত আল কাবায়ের গ্রন্থ থেকে সঙ্কলন করা।কেউ বিস্তারীত দলিল সহ দেখতে চাইলে তার জন্য গ্রন্থটি দ্রষ্টব্য।আমি সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছি।ছাপানোর ইচ্ছা আছে।দোয়া চাই সবার কাছে।যদি কারো দ্বারা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন কবিরা সংঘটিত হয়ে যায় তবে খাঁটি মনে তাওবা করা ছাড়া আল্লাহ তার এই গুনাহ মাফ করবেননা।তাওবার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে আগামী পোষ্টে লিখার ইচ্ছা আছে।আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সকল ছোট বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফীক্ব দিন।আমীন।و صلى الله و سلم على نبينا محمد 

কবিরা গুনাহের বর্ণনা ১

নিম্নে যে কবিরা গুনাহ গুলোর বর্ণনা পেশ করছি সে গুলো কবিরা গুনাহ হওয়ার পক্ষে কুরান ও হাদীসে একাধিক প্রমান রয়েছে।এখানে এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে তা উল্লেখ করা সম্ভব নয়।কিছু কবিরা গুনাহ যে গুলো এক বাক্যে বুজে আসেনা সেগুলো সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
১-আল্লাহ তাআলার সাথে শিরক করা
২-মানুষ হত্যা করা
৩-যাদু করা(ভান, টোনা মেরে মানুষের ক্ষতি করা
৪-নামাজ না পড়া
৫-জাকাত আদায়ে অস্বিকার করা
৬-কোন বৈধ কারণ ছাড়া রমজানের রোজা না রাখা
৭-শক্তি ও সামর্থ থাকা সত্বেও হজ্ব না করা
৮-পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া
৯-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করা
১০-জিনা বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া
১১-সমকামিতা বা মহিলার পেছন পথে সংগম করা
১২-সুদ খাওয়া
১৩-এতিমের সম্পদ ভক্ষণ(ভোগ)করা
১৪-আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাঃ এর উপর মিথ্যা আরোপ করা
১৫-জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা
১৬-রাষ্ট্র প্রধান কতৃক প্রজাদের সম্পদ ও অধিকার আত্মসাত এবং প্রজাদের উপর অত্যাচার করা
১৭-অহংকার
১৮-মিথ্যা স্বাক্ষি দেয়া
১৯-মদ পান করা
২০-জুয়া
২১-সতি সাধবী মহিলার উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া
২২-যুদ্ধ লব্দ মাল থেকে আত্মসাত করা
২৩-চুরি করা
২৪-ডাকাতি করা
২৫-মিথ্যা কসম বা শপথ
২৬-জুলুম বা অত্যাচার
২৭-চাঁদাবাজি
২৮-হারাম মাল ভক্ষণ এবং যে কোন ভাবে তা ব্যবহার করা
২৯-আত্মহত্যা করা
৩০-মিথ্যা বলা
৩১-আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামী বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধানে বিচার কার্য সম্পাদন করা
৩২-ঘুষ খাওয়া এবং ঘুষ নিয়ে কারো পক্ষে রায় দেয়া
৩৩-পোষাক পরিচ্ছেদ,চলা ফেরা ইত্যাদীতে নারী পুরুষের রূপ ধারণ করা কিংবা পুরুষ নারীর রূপ ধারণ করা
৩৪-দু জনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টা এবং (দাইয়ূছ)যে নিজের পরিবারের অপকর্ম কে উদারমনা হয়ে সমর্থন করে
৩৫-হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয়েছে(স্ত্রী কে তিন তালাক দেয়ার পর স্বামির জন্য ঐ স্ত্রী হারাম হয়ে যায়।কিন্তু ঐ মহিলার দ্বিতীয় কোথাও স্বাভাবিক বিয়ে হওয়ার পর যদি ঐ স্বামি তাকে তালাক দেয় তবে এই মহিলা তার প্রথম স্বামির জন্য হালাল হয়।পূণরায় বিয়ে করে তাকে গ্রহন করতে পারে।অথচ এখন দেখা যায় স্বামি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার চুক্তি ভিত্তিক হিল্লা বিয়ে দেয়া হয় কিছু সময়ের জন্য।যখন চুক্তি মাফিক চুক্তি বিয়ের স্বামি মহিলাকে
তালাক দেয়,প্রথম স্বামি পূণঃ বিয়ে পড়ে তাকে গ্রহন করে।এটা শরিয়ত সন্মত নয়।এখানে চুক্তি ভিত্তিক স্বামি হল হালাল কারী আর প্রথম স্বামি হল যার জন্য হালাল করা হয়েছে।এখানে উভয়েই এই কবিরা গুনায় সমান অংশিদার।)
(চলবে)

কবিরা গুনাহ বা মহা পাপ



"إن تجتنبو كبائر ما تنهون عنه نكفر عنكم سيئاتكم و يدخلكم مدخلا كريما"(النساء-31)
কুরানে কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,তোমরা যদি সেই মহা পাপ সমূহ থেকে বিরত হও যা হতে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে,তা হলেই আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবো এবং তোমাদের সন্মানপ্রদ গন্তব্যস্থানে প্রবিষ্ট করবো।(নিসা-৩১)
বর্ণীত আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা নিজ দয়ায় এবং নিজ দায়িত্বে ঐব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জামিন হয়েছেন যে ব্যক্তি কবিরা গুনাহ সমূহ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছে।কেননা সগিরা গুনাহগুলো জুমা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রমজানের রোজা ইত্যাদী দ্বারা মাফ হয়ে যায়।হাদীস শরীফে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমা থেকে অন্য জুমা ও এক রমজান থেকে অন্য রমজান-মধ্যবর্তি সময়ের সগিরা গুনাহ সমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ,যদি বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।(মুসলিম)অর্থাৎ বান্দা যদি নিজেকে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে,তবে এক নামাজ থেকে দ্বিতীয় নামাজের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে কোন সগিরা হয়ে থাকলে তা দ্বিতীয় নামাজ আদায়ের দ্বারাই মাফ হয়ে যাবে।এমনিভাবে জুমা ও রমজানের দ্বারাও তার মধ্যবর্তি গুনাহ মাফ হবে।
এ থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাথে আরো একটি বিষয় দ্রষ্টব্য যে উলামায়ে কিরামের ভাষ্যানুযায়ি কবিরা গুনাহ যেমন তাওবা ও ইস্তেগফারের পর কবিরা গুনাহ থাকেনা অর্থাৎ মাফ হয়ে যায় তেমনিভাবে সগিরা গুনাহ ও বার বার করার দ্বারা সগিরা গুনাহ থাকেনা, তা কবিরা গুনাহে রূপান্তরীত হয়ে যায়।সুতরাং কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে প্রথমত কবিরা গুনাহকে জানতে হবে এবং সেগুলো চিনতে হবে।কেননা না চিনলে তা থেকে নিজেকে বাঁচাবো কিভাবে।এ প্রসংগেই হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ বলেন,মানুষ রাসূল সাঃ কে ভাল কাজের ব্যপারে প্রশ্ন করতো,অথচ আমি মন্দ কাজের ব্যপারে জেনে নিতাম,এ ভয়ে যে খারাপ যেন আমাকে না পেয়ে বসে।
কবিরা গুনাহের পরিচয়
অনেকেই মনে করে থাকেন যে কবিরা গুনাহ শুধুমাত্র সাতটি যা হাদীসে কাবায়েরে(কবিরা গুনাহ সম্পর্কিত হাদীস)উল্লেখ আছে।কিন্তু এ ধারণাটি সঠিক নয়।কেননা এ সাতটি কাজ কবিরা গুনাহ ঠিকই,কিন্তু এ হাদীসের মধ্যে কবিরা গুনাহ কে এ সাতটির মধ্যে সিমাবদ্ধ করা হয়নি।অর্থাৎ এ হাদীসে রাসূল সাঃ এসাতটির মধ্যে কবিরা গুনাহকে সিমাবদ্ধ করেননি,সাতটি ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহের বর্ণনা দিয়েছেন মাত্র।এ প্রসংগেই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন,কবিরা গুনাহ গণনা করলে সত্তরটি পর্যন্ত হয়।আর এসাতটি ঐ সত্তরটিরই অংশ।(বর্ণনায়-ইমাম ত্বাবারী)আল্লামা শামছুদ্দীন যাহবী রাঃ বলেন,হাদীসে কাবায়ের এর সাতটি গুনাহের মধ্যে কবিরা গুনাহের সিমাবদ্ধতা নেই।শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাঃ ও অন্যান্য উলামায়ে কিরাম বলেন,"কবিরা গুনাহ হল প্রত্যেক ঐ গুনাহ যার জন্য দুনিয়াতে শাস্তির বিধান রয়েছে অথবা আখিরাতে শাস্তির ধমকি(হুসিয়ারি)দেয়া হয়েছে"। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাঃ একটু বাড়িয়ে এটাও বলেছেন,যেগুনাহের জন্য ঈমান চলে যাওয়ার ধমকি এসেছে কিংবা লানত(বদ দোয়া)ইত্যাদী করা হয়েছে তাও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত।আর এ কবিরা গুনাহকে উলামায়ে কিরাম গণনা করে সত্তর বা ততধিক পেয়েছেন।
কবিরা গুনাহের বর্ণনা  
নিম্নে যে কবিরা গুনাহ গুলোর বর্ণনা পেশ করছি সে গুলো কবিরা গুনাহ হওয়ার পক্ষে কুরান ও হাদীসে একাধিক প্রমান রয়েছে।এখানে এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে তা উল্লেখ করা সম্ভব নয়।
(চলবে)