সোমবার, ২৭ জুন, ২০১১

তাওবার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং শর্তাবলী

তাওবা অর্থ হলো ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা।আর শরীয়তের ভাষায় তাওবা হলো কোন পাপ হয়ে গেলে তা থেকে লজ্জিত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা।আমার পূর্বের তিনটি পোষ্ট ছিল গুনাহ সম্পর্কীত।গুনাহ করে ফেললে বা হয়ে গেলে তার শাস্তি থেকে পরিত্রানের একমাত্র উপায় হল তাওবা।তাই গুনাহ ও তাওবা একে অপরের সাথে ওৎপোতভাবে জড়িত।এই জন্যই আজকে তাওবা নিয়ে লিখতে বসেছি।মানব জাতির পিতা আদম আঃ থেকেই মানুষ ভূল করা আরম্ভ করেছে।তাই মানুষ মাত্রই ভূল বা গুনাহ করবে এটাই স্বাভাবিক।হাদিসে পাকে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেনঃ-প্রত্যেক আদম সন্তানই অপরাধ করে,তবে উত্তম অপরাধি তারাই যারা অপরাধ হয়ে গেলে তা থেকে তাওবা করে নেয়।(আহমদ,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ)অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,রাসূল সাঃ বলেনঃ-ঐরবের শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে যদি তোমরা গুনাহ না কর(অর্থাৎ মানুষ মাত্রই গুনাহ হবে।কারণ মানুষ ফেরেস্তা নয়)তবে আল্লাহ তোমাদের বাদ দিয়ে এমন এক জাতি আনয়ন করবেন যারা গুনাহ করবে এবং গুনাহ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন।(মুসলিম)
তাওবার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের সূরায়ে নূরে ইরশাদ করেনঃ-وتوبوا إلى الله جميعا ايه المؤمنون لعلكم تفلحون হে মুমিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর,যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।(নূর-৩১)বর্ণীত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাওবা কে সফলতার সাথে যুক্ত করেছেন।
সূর হুদে ইরশাদ করেনঃ-وأن استغفروا ربكم ثم توبو إليه তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর তৎপর তাঁর প্রতি প্রত্যাবর্তন কর(নিবিষ্ট হও)হুদ-৩)বর্ণীত আয়াত থেকে বুজতে পারি যে শুধু গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা যথেষ্ট নয়,বরং ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট হতে হবে।আর এটাই হল তাওবা।শুধু ক্ষমা প্রার্থনার নাম তাওবা নয়।
সূরা তাহরীমে ইরশাদ হয়েছেঃ-يا ايهاالذين آمنو توبوا الى الله توبة نصوحا হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর একান্ত বিশুদ্ধ তাওবা(তাহরীম-৮)এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিশুদ্ধ তাওবা করতে বলেছেন।বিশুদ্ধ তাওবা সম্পর্কে সামনে আলোচনা করবো।এছাড়াও তাওবা ও ইস্তেগফারের গুরুত্ব আল্লাহ তাআলা অনেক আয়াতে বর্ণনা করেছেন।
তাওবার প্রয়োজনীয়তা 
আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি-আল্লাহর শপথ আমি দৈনিক সত্তরেরও অধিকবার আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করি।(বুখারী-৬৩০৭-আহমাদ-২/২৮২,৩৪১)
আঘার বিন ইয়াসার মুযানী রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেনঃ-হে মানুষ সকল তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর,কেননা আমি দৈনিক শতবার তাওবা করি।(মুসলিম-২৭০২)দেখুন আল্লাহর রাসুল সাঃ যেখানে দৈনিক শতবার তাওবা করেন সেখানে আমাদের কি করা উচিত? অন্য এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাঃ কে এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন,ইয়া রাসূলাল্লাহ আল্লাহ তো আপনার আগে পিছের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন, তাইলে আপনার এত তাওবা-ইস্তেগফারের প্রয়োজন কি? উত্তরে আল্লাহর রাসূল বললেন,আল্লাহ আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন তাই বলে কি আমি কৃতজ্ঞ বান্দা হবোনা!অর্থাৎ আল্লাহ আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তাই আমি তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় স্বরূপ এত তাওবা ইস্তেগফার করি।
তাওবার শেষ সময় 
আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য তাওবার দ্বার সব সময় খোলা রেখেছেন।যখনি বান্দা চাইবে তাওবা করে আল্লাহর নিকট ফিরে আসতে পারবে।কিন্তু এমন দুটি সময় আছে যখন বান্দা চাইলে ও আল্লাহ তার তাওবা গ্রহন করবেননা।
এক-যখন মৃত্যুদূত বান্দার প্রাণ নিতে আসবে।
দুই-ক্বিয়ামতের পূর্বে যখন ক্বিয়ামতের বড় নিদর্শণ সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় হবে।
আবু মুসা আশআরী রাঃ বর্ণনা করেন,রাসূল সাঃ বলেছেনঃ-আল্লাহ তাআলা রাতে আপন হাত বিছিয়ে দেন দিনের পাপীদের তাওবা গ্রহন করার জন্য,আর দিনের বেলা হাত প্রশারীত করেন রাতের পাপীদের তাওবা গ্রহন করার জন্য।এভাবে চলতে থাকবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়া পর্যন্ত।(মুসলিম-২৭৫৯)
আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণীত রাসূল সাঃ বলেন যে ব্যাক্তি সূর্য পশ্চিম থেকে উদয় হওয়ার পূর্বে তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা ক্ববুল করবেন।(মুসলিম-২৭০৩)ওমর রাঃ থেকে বর্ণীত রাসূল সাঃ বলেন, আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহন করবেন যতক্ষণ না তার গলার গরগর আওয়াজ শুরু হবে(অর্থাৎ তার রুহ যখন গলায় উঠে যাবে)তিরমিযী-৩৫৩৭)কুরানে কারীমে ইরশাদ হয়েছেঃ-তাওবা তাদের জন্য নয় যারা পাপ করেছে অতপর যখন মৃত্যু আসে তখন তারা বলে আমি এখন তাওবা করলাম।(নিসা-১৮)এটা একেবারে মৃত্যুর পূর্ব অবস্থা।যখন আজরাইল আঃ মানুষের প্রাণ নিতে আসবেন।কারন ঈমান হল অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের নাম।আর এই দুই অবস্থায়ই মানুষের সামনে আখিরাত দৃশ্যমান হয়ে যায়।
তাওবার হুকুম
ইসলামী স্কলারগণ প্রত্যেক গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব।যদি কেউ অনেক গুলো গুনাহে জড়িত এবং সে যদি একটি বা কিছু গুনাহ থেকে তাওবা করে বাকিগুলো থেকে নয়,তবে সে যে গুনাহ থেকে তাওবা করেছে ঐ তাওবা শুদ্ধ।কিন্তু অন্য গুনাহগুলো তার কাঁধে রয়ে যাবে।
তাওবার শর্তাবলী 
ইসলামী স্কলারগণ তাওবা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত বর্ণনা করেছেনঃ-
১-যে গুনাহ থেকে তাওবা করছে সে গুনাহ সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেয়া।
২-কৃত গুনাহের উপর লজ্জিত হওয়া।
৩-আগামি জীবনে এই গুনাহ না করার পণ করা।
এই তিনটি শর্ত হল কৃত গুনাহ যদি আল্লাহ তাআলার সাথে সিমাবদ্ধ থাকে।কিন্তু যদি কৃত গুনাহ কোন মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয় তবে চতুর্থ আরেকটি শর্ত আছে তা হলঃ-
৪-যার অধিকার সে নষ্ট করেছে বা ক্ষুন্ন হয়েছে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।যদি তাতে সে অক্ষম হয় তবে মাফ চেয়ে নেয়া।যেমন কারো সম্পদ ভক্ষণ বা আত্মসাত করে থাকলে তাকে তা ফেরত দিবে।কারো পরনিন্দা করে থাকলে বা কাউকে অপবাদ দিয়ে থাকলে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিবে।উপরোক্ত শর্ত পূরণ করে তাওবা করলে তা বিশুদ্ধ তাওবা এবং আল্লাহ ইনশাল্লাহ তার তাওবা ক্ববুল করবেন ও তাকে ক্ষমা করবেন।হাদিসে পাকে এসেছে যে ব্যক্তি তার সকল গুনাহ থেকে তাওবা করবে সে মায়ের পেট থেকে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায়।আল্লাহ তাআলা আমাদের কে সকল গুনাহ থেকে তাওবা করে পবিত্র হওয়ার তাওফীক্ব দিন।আমীন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন